পোশাকের শিল্প উপাদান ও শিল্পনীতি

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - গার্হস্থ্য বিজ্ঞান - NCTB BOOK

দেহের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতেই পরিচ্ছদের প্রয়োজন। ব্যক্তিত্বের বিকাশেই পরিচ্ছদের সার্থকতা। আর ব্যক্তিত্বের বিকাশের জন্য প্রত্যেকের উচিত রুচিসম্মত পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করা। যেহেতু পোশাকপরিচ্ছদ দৈনন্দিন জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শিল্প, তাই এই শিল্প প্রস্তুত, নির্বাচন পরিধানে শিল্প উপাদান শিল্পনীতির সুষ্ঠু প্রয়োগে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। প্রকৃতপক্ষে খুব কম ব্যক্তিই নিখুঁতভাবে জন্মগ্রহণ করে। দেহের বিভিন্ন অংশের ত্রুটিসমূহ সুপরিকল্পিত পোশাকের আকৃতির মাধ্যমে গোপন করে সুন্দর দিকগুলো প্রস্ফুটিত করে ব্যক্তিত্বকে আকর্ষণীয় করে তোলা যায়

Content added By

পোশাকের শিল্প উপাদান

পোশাক তৈরি কারুশিল্পের অন্তর্গত একটি শিল্প। অন্যান্য শিল্পের ন্যায় এই শিল্প সৃষ্টির ক্ষেত্রেও বহু বছর আগে থেকেই কিছু উপাদান ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই উপাদানগুলো বিভিন্ন স্থানে বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হলেও ব্যবহারের উদ্দেশ্য ছিল সব সময়ই একদেহকে সৌন্দর্যমণ্ডিত বা অলংকৃত করা। পোশাকশিল্পে যেসব শিল্প উপাদানগুলো ব্যবহৃত হয় তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- রং, বিন্দু, রেখা, আকার জমিন। সুন্দর আকর্ষণীয় পোশাক তৈরির ক্ষেত্রে এই শিল্প উপাদানের যথাযথ প্রয়োগ এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

রং আমাদের চারপাশের প্রতিটি বস্তুরই নিজস্ব রং রয়েছে। এই রঙের উৎস প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম হতে পারে। পোশাক পরিচ্ছদে সুষ্ঠুভাবে রং ব্যবহার করার জন্য বর্ণচক্রের রং সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকা দরকার। রং মূলত তিন প্রকার:- ১। মৌলিক রং ২। গৌণ রং এবং ৩। প্রান্তিক রং।

১। মৌলিক রংলাল, হলুদ নীল এই তিনটি মৌলিক রং। মৌলিক বা প্রাথমিক রংগুলো বিশুদ্ধ রং। কেননা এগুলো অন্যান্য রঙের সংমিশ্রণে তৈরি হয় না বরং এদের সংমিশ্রণে অন্যান্য রং সৃষ্টি হয়

২। গৌণ রং দুইটি মৌলিক রঙের মিশ্রণে গৌণ রং তৈরি হয়। এদেরকে মিশ্র বা মাধ্যমিক বর্ণও বলা হয়। যেমন-হলুদ + নীল = সবুজ, নীল + লাল = বেগুনি, লাল + হলুদ কমলা

৩। প্রান্তিক রং মৌলিক রঙের সাথে কাছাকাছি যে কোনো একটি গৌণ রং মিশিয়ে প্রান্তিক রং প্রস্তুত করা - হয়। যেমন- হলুদ + সবুজ হলদে সবুজ, নীল + সবুজ = নীলাভ সবুজ, নীল + বেগুনি = নীলাভ = বেগুনি, লাল + বেগুি লালচে বেগুনি, লাল + কমলা লালচে কমলা, কমলা + হলুদ = হলদে = = কমলা

 

 

 

হলুদ

কমলা

বেগুনী

হলদে কমলা

হলদে সবুজ

নীল

লাল

লালচে কমলা

নীলাভ সবুজ

লালচে বেগুনী

নীলাভ বেগুনী

মৌলিক রং

গৌণ রং

প্রান্তিক রং

 

কাজমৌলিক রং, গৌণ রং এবং প্রান্তিক রং উল্লেখ করে একটি বর্ণচক্র তৈরি কর। -

প্রত্যেক প্রকার রঙেরই নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মৌলিক রংগুলোর মধ্যে লাল হলুদ এবং তাদের মিশ্রণে উৎপন্ন সমস্ত রংগুলো উষ্ণ বা উজ্জ্বল বর্ণ নামে পরিচিত। অন্যদিকে নীল এবং নীলের মিশ্রণে উৎপন্ন রংগুলো শীতল বা স্নিগ্ধ বর্ণ নামে পরিচিত। সাধারণত উষ্ণ বা উজ্জ্বল রংগুলো আমাদের চোখ পীড়িত করে তোলে, মনে উষ্ণ বা গরমভাব জাগ্রত করে, দূরের জিনিস কাছে টানে, বস্তুকে অপেক্ষাকৃত বড় করে তোলে এবং অন্যের মনোযোগ বেশি আকর্ষণ করে। অন্যদিকে শীতল বা স্নিগ্ধ রং মনে শান্তভাব আনে, বস্তুকে দূরে সরিয়ে দেয়, বস্তুকে অপেক্ষাকৃত ছোট করে দেখায় এবং এরা অন্যের মনোযোগ আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হয়

কাজবিভিন্ন ধরনের রঙের বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ কর

Content added By

পোশাকে রঙের ভূমিকা

পোশাকের জন্য মানানসই রং নির্বাচন করে ব্যক্তিকে আরও মাধুর্যময় করে তোলা যায়। আবার যে রং মানায় না সে রঙের পোশাক পরলে মানুষকে মলিন দেখায়। প্রকৃতপক্ষে সবই রঙের কারসাজি। যেহেতু রঙের ভূমিকা ব্যাপক তাই পোশাকের রঙের প্রতি আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। পোশাকে রঙের ভূমিকা সম্পর্কে নিম্নে আলোকপাত করা হলো-

. সুন্দর ব্যক্তিত্ব গঠন - রং চেহারার মধ্যে আশ্চর্য পরিবর্তন আনতে পারে। পোশাকের রং সঠিকভাবে নির্বাচন করলে একটি সাধারণ মেয়েকে অসাধারণ মনে হবে। বয়স, ব্যক্তিত্ব, উপলক্ষ ইত্যাদি অনুসারে পোশাকে উপযুক্ত রং নির্বাচনে ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস দেহের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে পোশাকের ত্রুটিপূর্ণ রং নির্বাচন ব্যক্তির সৌন্দর্য বা ব্যক্তিত্বকে ম্লান করে দিতে পারে। পোশাকের রং নির্বাচন করার সময় তাই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

. দেহত্বকে উজ্জ্বলতা প্রদান পরিধানকারীর দেহ ত্বকের উপর পোশাকের রঙের প্রভাব অনেক বেশি। তাই পোশাকের রং এমনভাবে নির্বাচন করতে হবে যাতে দেহত্বক বাহ্যিক দৃষ্টিতে আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠে।

  • ফর্সা একজন মেয়েকে যে কোনো রঙের পোশাকেই সুন্দর দেখাবে। অন্যদিকে গায়ের রং শ্যামলা হলে গাঢ় রং বর্জন করে হালকা রং নির্বাচন করতে হবে, যাতে তার গায়ের রং উজ্জ্বল দেখায়
  • শ্যামলা মেয়েরা যদি মানানসই হালকা উজ্জ্বল রঙের পোশাক পরে তবে তাদের কিছুটা ফর্সা লাগবে।

. দেহাকৃতির পরিবর্তন রং পরিবর্তনের মাধ্যমে ব্যক্তিবিশেষকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে মোটা বা পাতলা হিসেবে উপস্থাপন করা যায়। তাই দেহাকৃতি বিবেচনা করে পোশাকের রং নির্বাচন করা উচিত

  • লম্বা মধ্যম দেহাকৃতির মেয়েরা বয়সের সাথে সঙ্গতি রেখে সব রঙের পোশাকই নির্বাচন করতে পারে।
  • খাটো বা পাতলা দেহাকৃতির পক্ষে দুই রং বিশিষ্ট পোশাক উপযুক্ত হবে না। ধরনের মেয়েদের সাধারণত হালকা রঙের পোশাকই মানায়। হালকা রঙের শাড়ি, ব্লাউজ এরা নির্বাচন করতে পারে
  • মেয়েদের পাতলাভাব বাহ্যিক দৃষ্টিতে কমানোর জন্য উজ্জ্বল রঙের পোশাক নির্বাচন করা যেতে পারে। সরু কোমরের অধিকারীর শাড়ি ব্লাউজ বিপরীত রঙের হতে পারে, কিন্তু যাদের কোমর ভারী তারা একই রঙের জামা কাপড় পরতে পারে।
  • মোটা মেয়েদের গাঢ় রঙের পোশাক পরলে আরও মোটা দেখাবে। তাই হালকা রঙের সালোয়ার, কামিজ, ওড়না, শাড়ি, ব্লাউজ অন্যান্য আনুষঙ্গিক উপকরণ এরা নির্বাচন করতে পারে।

. প্রাধান্য সৃষ্টি পোশাকের রং নির্বাচন করার সময় দেহের সুন্দর অংশকে প্রাধান্য দিতে হলে উক্ত ক্ষেত্রে উজ্জ্বল বা গাঢ় রং নির্বাচন করা যেতে পারে। যেমন -

  • ফ্রকের গাঢ় রঙের ডিজাইন ব্যবহার করে ফ্রকটিকে আকর্ষণীয় করা যায়
  • হালকা রঙের শাড়িতে গাঢ় রঙের ডিজাইন সৃষ্টি করেও প্রাধান্য আনা যায়
  • বিপরীত রং ব্যবহার করেও পোষাকের আকর্ষণ বাড়ানো যেতে পারে।

আবার কোনো ব্যক্তি যদি নিজেকে প্রকাশ করতে না চায় তাহলে শীতল বা হালকা রঙের পোশাক নির্বাচন করতে পারে, এতে করে শরীরের কোনো অংশই বেশি প্রাধান্য পায় না।

. পোশাকে সমন্বয় রক্ষা রং পোশাকের ডিজাইনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই দেহ ত্বক শারীরিক - গঠনকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের জন্য পোশাকে সন্নিবেশিত বিভিন্ন রঙের সম্পর্ক এমন হওয়া উচিত, যাতে সব রং মিলে একটি সমন্বয়ের আভাস পাওয়া যায়। একটি পোশাকে বিভিন্ন রং ব্যবহৃত হতে পারে। ক্ষেত্রে পোশাকে সমন্বয় রক্ষা করতে হলে

  • দুটি রঙের ব্যবহার এক না হয়ে একটি অপরটি হতে বেশি হওয়া উচিত।
  • আবার যখন হালকা রঙের পোশাক নির্বাচন করতে হয় তখন পোশাকের ছোট ছোট অংশে গাঢ় রং ব্যবহার করা উচিত।
  • ছাড়া কোনো ব্যক্তির জন্য যে রং মানানসই হবে পোশাকে সে রং দিয়ে প্রাধান্য সৃষ্টি করা যেতে পারে।

কাজ: তোমার দেহাকৃতি বিবেচনা করে কোন রঙের পোশাক ব্যবহার যথাযথ তা ব্যাখ্যা কর

পোশাকে রেখার প্রভাব- পোশাকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে রেখা একটি শক্তিশালী শিল্প উপাদান। কতোগুলো রেখার - সমন্বয়ে একটি পোশাকের আকৃতি গড়ে উঠে। পোশাকের নকশায় রেখার বৈচিত্র্যময় বিন্যাসের ফলে পরিধানকারীকে কখনো লম্বা, কখনো খাটো, কখনো মোটা, আবার কখনো রোগা মনে হয়। পোশাকের নকশায় রেখার সুষ্ঠু বিন্যাসের মাধ্যমে দেহের ছোটখাটো ত্রুটি গোপন করা যায়

রেখা মূলত দুই প্রকার- () খাড়া রেখা () বক্র রেখা। ছাড়া রেখার গতিপথের ওপর নির্ভর করে রেখাকে আবার ছয় ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- ১। খাড়া রেখা ২। সমান্তরাল রেখা ৩। কোনাকুনি রেখা ৪। বক রেখা ৫। তীর্যক রেখা এবং ৬। ভগ্ন রেখা

প্রতিটি রেখার নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা পরিধানকারীর দেহ কাঠামো, উচ্চতা, মুখমণ্ডল, গ্রীবা প্রভৃতির উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। এসব রেখার সুচিন্তিত নির্বাচন সুষম বিন্যাসের মাধ্যমে দেহের ত্রুটি গোপন করে ব্যক্তিত্বকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব। এখানে পোশাকের ওপর বিভিন্ন রেখার প্রভাব তুলে ধরা হলো

১। খাড়া রেখা- খাড়া বা লম্বা রেখা গম্ভীর উদ্দেশ্যমূলক প্রচেষ্টা, সাহস, সততা ইত্যাদি প্রকাশ করে। এই রেখা সাধারণত কোনো বস্তুর দৈর্ঘ্য আপাত দৃষ্টিতে বাড়ায়। তাই এই রেখার নকশার পোশাক মোটা খাটো ব্যক্তির জন্য বিশেষ উপযোগী। এতে দেহের খাটো ভাব কিছুটা দূর হয় এবং দেখতে লম্বা মনে হয়

 

২। সমান্তরাল রেখা - ধরনের রেখার মাধ্যমে বিশ্রাম আরামের অনুভূতি আসে লম্বা রোগা মানুষের জন্য ধরনের রেখার পোশাক উপযোগী। এতে তাদের দেহের কৃশ ভাব কিছুটা কম মনে হয়। ধরনের মেয়েরা চওড়া পাড়ের শাড়ি, আড়াআড়ি রেখার ডুরে শাড়ি পরতে পারে। এই রেখা আপাত দৃষ্টিতে কোনো কিছুর দৈর্ঘ্যকে হ্রাস করে এবং প্রশস্ততা বৃদ্ধি করে।

 

৩। বক্র রেখা- বক্র রেখা দিয়ে কোমলতা, নমনীয়তা, তৎপরতা ইত্যাদি বোঝানো - হয়। বক্র রেখার গতি ঊর্ধ্বমুখী হলে আনন্দ-উল্লাস বোঝায়। পক্ষান্তরে গতি নিম্নমুখী হলে তা বিষাদের ভাব প্রকাশ করে। ঢেউ খেলানো বক্র রেখা আপাত দৃষ্টিতে দৈর্ঘ্য কমায়, তবে সৌন্দর্য কোমনীয়তা বাড়িয়ে দেয়। এরূপ রেখা পোশাকে বৈচিত্র্য ছন্দ আনে

 

৪। তীর্যক বা কৌণিক রেখা তীর্যক রেখা সংযমের পরিচয় বহন করে। এই রেখার বৈচিত্র্যময় ব্যবহারের মাধ্যমে কোনো কিছুর দৈর্ঘ্য হ্রাস বৃদ্ধি করা যায়। তীর্যক রেখাগুলো ঊর্ধ্বমুখী, সরু কাছাকাছি হলে পরিধানকারীকে লম্বা এবং অন্যদিকে নিম্নমুখী, চওড়া কাছাকাছি না হলে মোটা খাটো মনে হবে।

 

৫। আঁকাবাঁকা বা জিগজ্যাগ রেখা এই রেখা দ্বৈত ভূমিকা পালন করে। এই রেখাগুলোর - কোণের মাত্রা দিকের উপর নির্ভর করে কোনো কোনো সময় ব্যক্তিকে লম্বা এবং কোনো কোনো সময় খাটো মোটা মনে হয়

পোশাকে বিন্দুর প্রভাব যে কোনো শিল্পের building block বা ভিত্তি হচ্ছে বিন্দু। বিন্দু বড়, ছোট, মোটা বা চিকন হতে পারে। আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে, তাদের প্রত্যেকের মাঝেই আছে রেখা। আর এই রেখার সৃষ্টি হয় বিন্দু থেকে। ছোট একটি বিন্দু যখন গতি পায় তখন তা থেকেই রেখা, আকার, আকৃতি গঠিত হতে পারে। আবার অসংখ্য ছোট ছোট বিন্দুর সমন্বয়ে নতুন এক অনুভূতির মাধ্যমে জমিন সৃষ্টি করা যায়, যাকে stippling বলে। পোশাকে বিন্দুর পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে ছন্দ আনায়ন করা যায়

কাজপোশাকে বিভিন্ন ধরনের রেখার প্রভাবের উপর একটি চার্ট তৈরি কর।

Content added By

পোশাকে আকৃতির প্রভাব-

- দেহের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে পরিচ্ছদের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যে পরিচ্ছদ ব্যক্তিত্ব দেহের সৌন্দর্যকে ছাপিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে, সে পরিচ্ছদ যত মূল্যবানই হোক না কেন তা বর্জনীয় হবে। আর ব্যক্তিত্বের সুন্দর বিকাশের জন্য প্রত্যেকের উচিত নিজেকে জানা

  • প্রত্যেকেরই নিজের ধরন বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন করা উচিত। দেহের বিভিন্ন পেশি অংশ বিশেষের গঠনভঙ্গিকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে লক্ষ রাখা দরকার, যাতে পরিচ্ছদ বেশি আঁটসাঁট না হয়। বেশি আঁটসাঁট পোশাক সুরুচি সুক্ষ্ম সৌন্দর্যানুভূতির পরিচয় দেয় না বরং দেহের ত্রুটিগুলো এতে আরও প্রকট হয়ে ওঠে।
  • পরিচ্ছদ নির্বাচন করার সময় খাটো, লম্বা, মোটা, পাতলা ইত্যাদি বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় খাটো মোটা মেয়েরা বড় বড় ছাপার শাড়ি পরে। এতে তাদের উচ্চতা আরও কমে যায় এবং তাকে আরও মোটা লাগে। এদের জন্য ছোট ছোট ছাপার কাপড় উপযোগী।
  • পৃথিবীতে বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে কিছু কিছু সুন্দর দিক থাকে। যেমনসুন্দর কোমর, দৈহিক উচ্চতা, সুন্দর স্বাস্থ্য ইত্যাদি। আবার কিছু কিছু ত্রুটিও দেখা যায়। যেমন- স্ফীত হিপ, প্রশস্ত কাঁধ, খাটো গ্ৰীবা ইত্যাদি। দেহের বিভিন্ন অংশের ত্রুটি সুপরিকল্পিত পোশাকের আকৃতির মাধ্যমে গোপন করে সুন্দর দিকগুলো প্রস্ফুটিত করে ব্যক্তিত্বকে আকর্ষণীয় করে তোলা যায়।
  • ব্লাউজ বা কামিজে ইয়ক, চিকন টাক, কুঁচি, বুকে তালি, পকেট, চওড়া কলার ইত্যাদি ব্যবহার করে দেহের ত্রুটি ঢাকা যায়। বেশি স্ফীত বুক এবং প্রশস্ত কোমরের অধিকারীদের জন্য ঢিলেঢালা পোশাক উপযুক্ত। প্রশস্ত কোমরের ত্রুটি সুপরিকল্পিত মানানসই কোমর রেখার মাধ্যমেও ঢাকা যায়
  • যাদের গ্রীবা খাটো তাদের জন্যভিবাইউ' আকৃতির গলার নকশা মানানসই। এদের জন্য ছোট গলা বা উঁচু কলার উপযুক্ত নয়। অন্যদিকে যাদের গ্রীবা লম্বা বা সরু তাদের জন্য ছোট গলা এবং উঁচু ফিটিং গলা বেশি মানানসই।

 

 

  • মানুষের মুখের আকৃতি নানা রকম হয়। যেমন-লম্বা, গোল, চারকোনা, ডিম্বাকৃতি। ডিম্বাকৃতি মুখমণ্ডলই আদর্শ। এসব মুখাকৃতির মেয়েরা সব ধরনের গলার নকশাযুক্ত পোশাক বিনা দ্বিধায় নির্বাচন করতে পারে। যাদের মুখের আকৃতি চারকোনা বা গোলাকার তাদেরভিআকৃতি এবংইউআকৃতির গলার নকশা ব্যবহার করা ভালো। লম্বা মুখ হলে ছোট গলার নকশা মানানসই হয়। ধরনের মেয়েরা উঁচু কলারের জামা পরলে তাদের গ্রীবার সরু ভাব ঢাকা পড়ে
  • অনেকের পেছনের দিকে ঘাড়ের কাছে মাংস উঁচু হয়ে থাকে। তা ঢাকার জন্য কেউ কেউ উঁচু কলার যুক্ত ব্লাউজ বা জামা পরে। কিন্তু এক্ষেত্রে সঠিক উপায় হচ্ছে ব্লাউজের গলার ছাঁটটিকে ওই মাংসপিণ্ডের ঠিক মাঝামাঝি স্থান দিয়ে নিয়ে আসা। এভাবে তৈরি ব্লাউজ পরলে ঘাড়ের কাছের ত্রুটি তত প্রকট হবে না
  • চেহারার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আলংকারিক বস্তুও নির্বাচন করতে হবে। যেমন- লম্বা চেহারার মেয়ে যদি লম্বা কানের দুল কিংবা একটি লম্বা নেকলেস পরে, তাহলে তাকে আরও লম্বা মনে হবে।

 

 

 

    কাজকোন ধরনের দেহাকৃতির জন্য কী ধরনের পোশাকের ডিজাইন হওয়া উচিত উল্লেখ   কর।

পোশাকে জমিনের প্রভাব -কাপড়ের জমিন নানা ধরনের হয়। পশমি বস্ত্র নরম, রেশমি কাপড় দেখতে - উজ্জ্বল, স্যাটিন বস্ত্ৰ চকচকে এবং সুতি বস্ত্র দৃঢ় প্রকৃতির হয়। সুতি, রেশমি, পশমি ছাড়াও তসর, অর্গ্যান্ডি ইত্যাদি কাপড়েও অনেক জমিন দেখা যায়। বস্ত্রের জমিনের ভিন্নতার জন্য প্রতিটি পোশাক ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হয়। যেমন- নরম, মধ্যম, দৃঢ়, ওজনে ভারী, চকচকে, নিষ্প্রভ ইত্যাদি। জমিনের সুষ্ঠু ব্যবহার করে ব্যক্তি নিজেকে কিছুটা লম্বা বা খাটো, রোগা বা মোটাভাবে উপস্থাপন করতে পারে

 

. জার্সি, শিফন ইত্যাদি নরম প্রকৃতির কাপড়। এসব কাপড়ের পোশাক শরীরের সাথে সেঁটে থাকে, ফলে শরীরের দোষ বা গুণ সহজে বোঝা যায়। নরম কাপড় পরিধানে আরাম অনুভূত হয়

. মধ্যম ধরনের দৃঢ় প্রকৃতির কাপড়, যেমন- ডেনিম কাপড় শরীরের সাথে বেশি সেঁটে থাকে না, ফলে শরীরের দোষ সহজে বোঝা যায় না।

. দৃঢ় প্রকৃতির যেমনট্যাফেটা-জাতীয় কাপড়ে পরিধানকারীকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে মোটা দেখায়

. ভারী যেমনপশমি কাপড়ে আপাতদৃষ্টিতে দেহ বড় দেখায়

. ফ্লানেল, ডেনিম প্রভৃতি নিষ্প্রভ জমিনের কাপড় বেশি আলো শোষণ করে, তাই এরূপ কাপড়ে কোনো বস্তু ছোট দেখায়। বয়স্ক মোটা মানুষের জন্য এরূপ বস্ত্র উপযোগী।

. চকচকে কাপড়ে আলোর প্রতিফলন হয় বলে পরিধানকারীকে বড় দেখায়। যেমন- সার্টিন, মারশেরাইজ

করা সুতির বস্ত্র ইত্যাদি। যেসব কাপড়ে ধাতব তন্তুর কাজ থাকে সেগুলোর জমিনও চকচকে হয়

লম্বা, রোগা অল্প বয়সীদের জন্য এমন জমিন মানানসই

সুগঠিত দেহাকৃতি অধিকারীরা সব ধরনের জমিনের পোশাকই পরতে পারে। ঋতু, দেহের আকৃতি বয়স ভেদে বস্ত্রের জমিন নির্বাচন করতে হয়

কাজপরিবারের সদস্যদের মধ্যে কার জন্য কী ধরনের জমিনের বস্ত্র প্রয়োজন এবং কেন প্রয়োজন - উল্লেখ কর

Content added By

 

পোশাকের শিল্প উপাদান শিল্পনীতি

দেহের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতেই পরিচ্ছদের প্রয়োজন। ব্যক্তিত্বের বিকাশেই পরিচ্ছদের সার্থকতা। আর ব্যক্তিত্বের বিকাশের জন্য প্রত্যেকের উচিত রুচিসম্মত পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করা। যেহেতু পোশাকপরিচ্ছদ দৈনন্দিন জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শিল্প, তাই এই শিল্প প্রস্তুত, নির্বাচন পরিধানে শিল্প উপাদান শিল্পনীতির সুষ্ঠু প্রয়োগে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। প্রকৃতপক্ষে খুব কম ব্যক্তিই নিখুঁতভাবে জন্মগ্রহণ করে। দেহের বিভিন্ন অংশের ত্রুটিসমূহ সুপরিকল্পিত পোশাকের আকৃতির মাধ্যমে গোপন করে সুন্দর দিকগুলো প্রস্ফুটিত করে ব্যক্তিত্বকে আকর্ষণীয় করে তোলা যায়

পোশাকের শিল্প উপাদান

পোশাক তৈরি কারুশিল্পের অন্তর্গত একটি শিল্প। অন্যান্য শিল্পের ন্যায় এই শিল্প সৃষ্টির ক্ষেত্রেও বহু বছর আগে থেকেই কিছু উপাদান ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই উপাদানগুলো বিভিন্ন স্থানে বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হলেও ব্যবহারের উদ্দেশ্য ছিল সব সময়ই একদেহকে সৌন্দর্যমণ্ডিত বা অলংকৃত করা। পোশাকশিল্পে যেসব শিল্প উপাদানগুলো ব্যবহৃত হয় তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- রং, বিন্দু, রেখা, আকার জমিন। সুন্দর আকর্ষণীয় পোশাক তৈরির ক্ষেত্রে এই শিল্প উপাদানের যথাযথ প্রয়োগ এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

রং আমাদের চারপাশের প্রতিটি বস্তুরই নিজস্ব রং রয়েছে। এই রঙের উৎস প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম হতে পারে। পোশাক পরিচ্ছদে সুষ্ঠুভাবে রং ব্যবহার করার জন্য বর্ণচক্রের রং সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকা দরকার। রং মূলত তিন প্রকার:- ১। মৌলিক রং ২। গৌণ রং এবং ৩। প্রান্তিক রং।

১। মৌলিক রংলাল, হলুদ নীল এই তিনটি মৌলিক রং। মৌলিক বা প্রাথমিক রংগুলো বিশুদ্ধ রং। কেননা এগুলো অন্যান্য রঙের সংমিশ্রণে তৈরি হয় না বরং এদের সংমিশ্রণে অন্যান্য রং সৃষ্টি হয়

২। গৌণ রং দুইটি মৌলিক রঙের মিশ্রণে গৌণ রং তৈরি হয়। এদেরকে মিশ্র বা মাধ্যমিক বর্ণও বলা হয়। যেমন-হলুদ + নীল = সবুজ, নীল + লাল = বেগুনি, লাল + হলুদ কমলা

৩। প্রান্তিক রং মৌলিক রঙের সাথে কাছাকাছি যে কোনো একটি গৌণ রং মিশিয়ে প্রান্তিক রং প্রস্তুত করা - হয়। যেমন- হলুদ + সবুজ হলদে সবুজ, নীল + সবুজ = নীলাভ সবুজ, নীল + বেগুনি = নীলাভ = বেগুনি, লাল + বেগুি লালচে বেগুনি, লাল + কমলা লালচে কমলা, কমলা + হলুদ = হলদে = = কমলা

 

 

 

হলুদ

কমলা

বেগুনী

হলদে কমলা

হলদে সবুজ

নীল

লাল

লালচে কমলা

নীলাভ সবুজ

লালচে বেগুনী

নীলাভ বেগুনী

মৌলিক রং

গৌণ রং

প্রান্তিক রং

 

কাজমৌলিক রং, গৌণ রং এবং প্রান্তিক রং উল্লেখ করে একটি বর্ণচক্র তৈরি কর। -

প্রত্যেক প্রকার রঙেরই নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মৌলিক রংগুলোর মধ্যে লাল হলুদ এবং তাদের মিশ্রণে উৎপন্ন সমস্ত রংগুলো উষ্ণ বা উজ্জ্বল বর্ণ নামে পরিচিত। অন্যদিকে নীল এবং নীলের মিশ্রণে উৎপন্ন রংগুলো শীতল বা স্নিগ্ধ বর্ণ নামে পরিচিত। সাধারণত উষ্ণ বা উজ্জ্বল রংগুলো আমাদের চোখ পীড়িত করে তোলে, মনে উষ্ণ বা গরমভাব জাগ্রত করে, দূরের জিনিস কাছে টানে, বস্তুকে অপেক্ষাকৃত বড় করে তোলে এবং অন্যের মনোযোগ বেশি আকর্ষণ করে। অন্যদিকে শীতল বা স্নিগ্ধ রং মনে শান্তভাব আনে, বস্তুকে দূরে সরিয়ে দেয়, বস্তুকে অপেক্ষাকৃত ছোট করে দেখায় এবং এরা অন্যের মনোযোগ আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হয়

কাজবিভিন্ন ধরনের রঙের বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ কর

 

পোশাকে রঙের ভূমিকা

পোশাকের জন্য মানানসই রং নির্বাচন করে ব্যক্তিকে আরও মাধুর্যময় করে তোলা যায়। আবার যে রং মানায় না সে রঙের পোশাক পরলে মানুষকে মলিন দেখায়। প্রকৃতপক্ষে সবই রঙের কারসাজি। যেহেতু রঙের ভূমিকা ব্যাপক তাই পোশাকের রঙের প্রতি আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। পোশাকে রঙের ভূমিকা সম্পর্কে নিম্নে আলোকপাত করা হলো-

. সুন্দর ব্যক্তিত্ব গঠন - রং চেহারার মধ্যে আশ্চর্য পরিবর্তন আনতে পারে। পোশাকের রং সঠিকভাবে নির্বাচন করলে একটি সাধারণ মেয়েকে অসাধারণ মনে হবে। বয়স, ব্যক্তিত্ব, উপলক্ষ ইত্যাদি অনুসারে পোশাকে উপযুক্ত রং নির্বাচনে ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস দেহের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে পোশাকের ত্রুটিপূর্ণ রং নির্বাচন ব্যক্তির সৌন্দর্য বা ব্যক্তিত্বকে ম্লান করে দিতে পারে। পোশাকের রং নির্বাচন করার সময় তাই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

. দেহত্বকে উজ্জ্বলতা প্রদান পরিধানকারীর দেহ ত্বকের উপর পোশাকের রঙের প্রভাব অনেক বেশি। তাই পোশাকের রং এমনভাবে নির্বাচন করতে হবে যাতে দেহত্বক বাহ্যিক দৃষ্টিতে আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠে।

  • ফর্সা একজন মেয়েকে যে কোনো রঙের পোশাকেই সুন্দর দেখাবে। অন্যদিকে গায়ের রং শ্যামলা হলে গাঢ় রং বর্জন করে হালকা রং নির্বাচন করতে হবে, যাতে তার গায়ের রং উজ্জ্বল দেখায়
  • শ্যামলা মেয়েরা যদি মানানসই হালকা উজ্জ্বল রঙের পোশাক পরে তবে তাদের কিছুটা ফর্সা লাগবে।

. দেহাকৃতির পরিবর্তন রং পরিবর্তনের মাধ্যমে ব্যক্তিবিশেষকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে মোটা বা পাতলা হিসেবে উপস্থাপন করা যায়। তাই দেহাকৃতি বিবেচনা করে পোশাকের রং নির্বাচন করা উচিত

  • লম্বা মধ্যম দেহাকৃতির মেয়েরা বয়সের সাথে সঙ্গতি রেখে সব রঙের পোশাকই নির্বাচন করতে পারে।
  • খাটো বা পাতলা দেহাকৃতির পক্ষে দুই রং বিশিষ্ট পোশাক উপযুক্ত হবে না। ধরনের মেয়েদের সাধারণত হালকা রঙের পোশাকই মানায়। হালকা রঙের শাড়ি, ব্লাউজ এরা নির্বাচন করতে পারে
  • মেয়েদের পাতলাভাব বাহ্যিক দৃষ্টিতে কমানোর জন্য উজ্জ্বল রঙের পোশাক নির্বাচন করা যেতে পারে। সরু কোমরের অধিকারীর শাড়ি ব্লাউজ বিপরীত রঙের হতে পারে, কিন্তু যাদের কোমর ভারী তারা একই রঙের জামা কাপড় পরতে পারে।
  • মোটা মেয়েদের গাঢ় রঙের পোশাক পরলে আরও মোটা দেখাবে। তাই হালকা রঙের সালোয়ার, কামিজ, ওড়না, শাড়ি, ব্লাউজ অন্যান্য আনুষঙ্গিক উপকরণ এরা নির্বাচন করতে পারে।

. প্রাধান্য সৃষ্টি পোশাকের রং নির্বাচন করার সময় দেহের সুন্দর অংশকে প্রাধান্য দিতে হলে উক্ত ক্ষেত্রে উজ্জ্বল বা গাঢ় রং নির্বাচন করা যেতে পারে। যেমন -

  • ফ্রকের গাঢ় রঙের ডিজাইন ব্যবহার করে ফ্রকটিকে আকর্ষণীয় করা যায়
  • হালকা রঙের শাড়িতে গাঢ় রঙের ডিজাইন সৃষ্টি করেও প্রাধান্য আনা যায়
  • বিপরীত রং ব্যবহার করেও পোষাকের আকর্ষণ বাড়ানো যেতে পারে।

আবার কোনো ব্যক্তি যদি নিজেকে প্রকাশ করতে না চায় তাহলে শীতল বা হালকা রঙের পোশাক নির্বাচন করতে পারে, এতে করে শরীরের কোনো অংশই বেশি প্রাধান্য পায় না।

. পোশাকে সমন্বয় রক্ষা রং পোশাকের ডিজাইনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই দেহ ত্বক শারীরিক - গঠনকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের জন্য পোশাকে সন্নিবেশিত বিভিন্ন রঙের সম্পর্ক এমন হওয়া উচিত, যাতে সব রং মিলে একটি সমন্বয়ের আভাস পাওয়া যায়। একটি পোশাকে বিভিন্ন রং ব্যবহৃত হতে পারে। ক্ষেত্রে পোশাকে সমন্বয় রক্ষা করতে হলে

  • দুটি রঙের ব্যবহার এক না হয়ে একটি অপরটি হতে বেশি হওয়া উচিত।
  • আবার যখন হালকা রঙের পোশাক নির্বাচন করতে হয় তখন পোশাকের ছোট ছোট অংশে গাঢ় রং ব্যবহার করা উচিত।
  • ছাড়া কোনো ব্যক্তির জন্য যে রং মানানসই হবে পোশাকে সে রং দিয়ে প্রাধান্য সৃষ্টি করা যেতে পারে।

কাজ: তোমার দেহাকৃতি বিবেচনা করে কোন রঙের পোশাক ব্যবহার যথাযথ তা ব্যাখ্যা কর

পোশাকে রেখার প্রভাব- পোশাকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে রেখা একটি শক্তিশালী শিল্প উপাদান। কতোগুলো রেখার - সমন্বয়ে একটি পোশাকের আকৃতি গড়ে উঠে। পোশাকের নকশায় রেখার বৈচিত্র্যময় বিন্যাসের ফলে পরিধানকারীকে কখনো লম্বা, কখনো খাটো, কখনো মোটা, আবার কখনো রোগা মনে হয়। পোশাকের নকশায় রেখার সুষ্ঠু বিন্যাসের মাধ্যমে দেহের ছোটখাটো ত্রুটি গোপন করা যায়

রেখা মূলত দুই প্রকার- () খাড়া রেখা () বক্র রেখা। ছাড়া রেখার গতিপথের ওপর নির্ভর করে রেখাকে আবার ছয় ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- ১। খাড়া রেখা ২। সমান্তরাল রেখা ৩। কোনাকুনি রেখা ৪। বক রেখা ৫। তীর্যক রেখা এবং ৬। ভগ্ন রেখা

প্রতিটি রেখার নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা পরিধানকারীর দেহ কাঠামো, উচ্চতা, মুখমণ্ডল, গ্রীবা প্রভৃতির উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। এসব রেখার সুচিন্তিত নির্বাচন সুষম বিন্যাসের মাধ্যমে দেহের ত্রুটি গোপন করে ব্যক্তিত্বকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব। এখানে পোশাকের ওপর বিভিন্ন রেখার প্রভাব তুলে ধরা হলো

১। খাড়া রেখা- খাড়া বা লম্বা রেখা গম্ভীর উদ্দেশ্যমূলক প্রচেষ্টা, সাহস, সততা ইত্যাদি প্রকাশ করে। এই রেখা সাধারণত কোনো বস্তুর দৈর্ঘ্য আপাত দৃষ্টিতে বাড়ায়। তাই এই রেখার নকশার পোশাক মোটা খাটো ব্যক্তির জন্য বিশেষ উপযোগী। এতে দেহের খাটো ভাব কিছুটা দূর হয় এবং দেখতে লম্বা মনে হয়

 

২। সমান্তরাল রেখা - ধরনের রেখার মাধ্যমে বিশ্রাম আরামের অনুভূতি আসে লম্বা রোগা মানুষের জন্য ধরনের রেখার পোশাক উপযোগী। এতে তাদের দেহের কৃশ ভাব কিছুটা কম মনে হয়। ধরনের মেয়েরা চওড়া পাড়ের শাড়ি, আড়াআড়ি রেখার ডুরে শাড়ি পরতে পারে। এই রেখা আপাত দৃষ্টিতে কোনো কিছুর দৈর্ঘ্যকে হ্রাস করে এবং প্রশস্ততা বৃদ্ধি করে।

 

৩। বক্র রেখা- বক্র রেখা দিয়ে কোমলতা, নমনীয়তা, তৎপরতা ইত্যাদি বোঝানো - হয়। বক্র রেখার গতি ঊর্ধ্বমুখী হলে আনন্দ-উল্লাস বোঝায়। পক্ষান্তরে গতি নিম্নমুখী হলে তা বিষাদের ভাব প্রকাশ করে। ঢেউ খেলানো বক্র রেখা আপাত দৃষ্টিতে দৈর্ঘ্য কমায়, তবে সৌন্দর্য কোমনীয়তা বাড়িয়ে দেয়। এরূপ রেখা পোশাকে বৈচিত্র্য ছন্দ আনে

 

৪। তীর্যক বা কৌণিক রেখা তীর্যক রেখা সংযমের পরিচয় বহন করে। এই রেখার বৈচিত্র্যময় ব্যবহারের মাধ্যমে কোনো কিছুর দৈর্ঘ্য হ্রাস বৃদ্ধি করা যায়। তীর্যক রেখাগুলো ঊর্ধ্বমুখী, সরু কাছাকাছি হলে পরিধানকারীকে লম্বা এবং অন্যদিকে নিম্নমুখী, চওড়া কাছাকাছি না হলে মোটা খাটো মনে হবে।

 

৫। আঁকাবাঁকা বা জিগজ্যাগ রেখা এই রেখা দ্বৈত ভূমিকা পালন করে। এই রেখাগুলোর - কোণের মাত্রা দিকের উপর নির্ভর করে কোনো কোনো সময় ব্যক্তিকে লম্বা এবং কোনো কোনো সময় খাটো মোটা মনে হয়

পোশাকে বিন্দুর প্রভাব যে কোনো শিল্পের building block বা ভিত্তি হচ্ছে বিন্দু। বিন্দু বড়, ছোট, মোটা বা চিকন হতে পারে। আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে, তাদের প্রত্যেকের মাঝেই আছে রেখা। আর এই রেখার সৃষ্টি হয় বিন্দু থেকে। ছোট একটি বিন্দু যখন গতি পায় তখন তা থেকেই রেখা, আকার, আকৃতি গঠিত হতে পারে। আবার অসংখ্য ছোট ছোট বিন্দুর সমন্বয়ে নতুন এক অনুভূতির মাধ্যমে জমিন সৃষ্টি করা যায়, যাকে stippling বলে। পোশাকে বিন্দুর পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে ছন্দ আনায়ন করা যায়

কাজপোশাকে বিভিন্ন ধরনের রেখার প্রভাবের উপর একটি চার্ট তৈরি কর।

 

পোশাকে বিন্দুর প্রভাব

পোশাকে আকৃতির প্রভাব- দেহের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে পরিচ্ছদের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যে পরিচ্ছদ ব্যক্তিত্ব দেহের সৌন্দর্যকে ছাপিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে, সে পরিচ্ছদ যত মূল্যবানই হোক না কেন তা বর্জনীয় হবে। আর ব্যক্তিত্বের সুন্দর বিকাশের জন্য প্রত্যেকের উচিত নিজেকে জানা

  • প্রত্যেকেরই নিজের ধরন বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন করা উচিত। দেহের বিভিন্ন পেশি অংশ বিশেষের গঠনভঙ্গিকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে লক্ষ রাখা দরকার, যাতে পরিচ্ছদ বেশি আঁটসাঁট না হয়। বেশি আঁটসাঁট পোশাক সুরুচি সুক্ষ্ম সৌন্দর্যানুভূতির পরিচয় দেয় না বরং দেহের ত্রুটিগুলো এতে আরও প্রকট হয়ে ওঠে।
  • পরিচ্ছদ নির্বাচন করার সময় খাটো, লম্বা, মোটা, পাতলা ইত্যাদি বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় খাটো মোটা মেয়েরা বড় বড় ছাপার শাড়ি পরে। এতে তাদের উচ্চতা আরও কমে যায় এবং তাকে আরও মোটা লাগে। এদের জন্য ছোট ছোট ছাপার কাপড় উপযোগী।
  • পৃথিবীতে বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে কিছু কিছু সুন্দর দিক থাকে। যেমনসুন্দর কোমর, দৈহিক উচ্চতা, সুন্দর স্বাস্থ্য ইত্যাদি। আবার কিছু কিছু ত্রুটিও দেখা যায়। যেমন- স্ফীত হিপ, প্রশস্ত কাঁধ, খাটো গ্ৰীবা ইত্যাদি। দেহের বিভিন্ন অংশের ত্রুটি সুপরিকল্পিত পোশাকের আকৃতির মাধ্যমে গোপন করে সুন্দর দিকগুলো প্রস্ফুটিত করে ব্যক্তিত্বকে আকর্ষণীয় করে তোলা যায়।
  • ব্লাউজ বা কামিজে ইয়ক, চিকন টাক, কুঁচি, বুকে তালি, পকেট, চওড়া কলার ইত্যাদি ব্যবহার করে দেহের ত্রুটি ঢাকা যায়। বেশি স্ফীত বুক এবং প্রশস্ত কোমরের অধিকারীদের জন্য ঢিলেঢালা পোশাক উপযুক্ত। প্রশস্ত কোমরের ত্রুটি সুপরিকল্পিত মানানসই কোমর রেখার মাধ্যমেও ঢাকা যায়
  • যাদের গ্রীবা খাটো তাদের জন্যভিবাইউ' আকৃতির গলার নকশা মানানসই। এদের জন্য ছোট গলা বা উঁচু কলার উপযুক্ত নয়। অন্যদিকে যাদের গ্রীবা লম্বা বা সরু তাদের জন্য ছোট গলা এবং উঁচু ফিটিং গলা বেশি মানানসই।

 

 

  • মানুষের মুখের আকৃতি নানা রকম হয়। যেমন-লম্বা, গোল, চারকোনা, ডিম্বাকৃতি। ডিম্বাকৃতি মুখমণ্ডলই আদর্শ। এসব মুখাকৃতির মেয়েরা সব ধরনের গলার নকশাযুক্ত পোশাক বিনা দ্বিধায় নির্বাচন করতে পারে। যাদের মুখের আকৃতি চারকোনা বা গোলাকার তাদেরভিআকৃতি এবংইউআকৃতির গলার নকশা ব্যবহার করা ভালো। লম্বা মুখ হলে ছোট গলার নকশা মানানসই হয়। ধরনের মেয়েরা উঁচু কলারের জামা পরলে তাদের গ্রীবার সরু ভাব ঢাকা পড়ে
  • অনেকের পেছনের দিকে ঘাড়ের কাছে মাংস উঁচু হয়ে থাকে। তা ঢাকার জন্য কেউ কেউ উঁচু কলার যুক্ত ব্লাউজ বা জামা পরে। কিন্তু এক্ষেত্রে সঠিক উপায় হচ্ছে ব্লাউজের গলার ছাঁটটিকে ওই মাংসপিণ্ডের ঠিক মাঝামাঝি স্থান দিয়ে নিয়ে আসা। এভাবে তৈরি ব্লাউজ পরলে ঘাড়ের কাছের ত্রুটি তত প্রকট হবে না
  • চেহারার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আলংকারিক বস্তুও নির্বাচন করতে হবে। যেমন- লম্বা চেহারার মেয়ে যদি লম্বা কানের দুল কিংবা একটি লম্বা নেকলেস পরে, তাহলে তাকে আরও লম্বা মনে হবে।

 

 

 

    কাজকোন ধরনের দেহাকৃতির জন্য কী ধরনের পোশাকের ডিজাইন হওয়া উচিত উল্লেখ   কর।

পোশাকে জমিনের প্রভাব -কাপড়ের জমিন নানা ধরনের হয়। পশমি বস্ত্র নরম, রেশমি কাপড় দেখতে - উজ্জ্বল, স্যাটিন বস্ত্ৰ চকচকে এবং সুতি বস্ত্র দৃঢ় প্রকৃতির হয়। সুতি, রেশমি, পশমি ছাড়াও তসর, অর্গ্যান্ডি ইত্যাদি কাপড়েও অনেক জমিন দেখা যায়। বস্ত্রের জমিনের ভিন্নতার জন্য প্রতিটি পোশাক ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হয়। যেমন- নরম, মধ্যম, দৃঢ়, ওজনে ভারী, চকচকে, নিষ্প্রভ ইত্যাদি। জমিনের সুষ্ঠু ব্যবহার করে ব্যক্তি নিজেকে কিছুটা লম্বা বা খাটো, রোগা বা মোটাভাবে উপস্থাপন করতে পারে

 

. জার্সি, শিফন ইত্যাদি নরম প্রকৃতির কাপড়। এসব কাপড়ের পোশাক শরীরের সাথে সেঁটে থাকে, ফলে শরীরের দোষ বা গুণ সহজে বোঝা যায়। নরম কাপড় পরিধানে আরাম অনুভূত হয়

. মধ্যম ধরনের দৃঢ় প্রকৃতির কাপড়, যেমন- ডেনিম কাপড় শরীরের সাথে বেশি সেঁটে থাকে না, ফলে শরীরের দোষ সহজে বোঝা যায় না।

. দৃঢ় প্রকৃতির যেমনট্যাফেটা-জাতীয় কাপড়ে পরিধানকারীকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে মোটা দেখায়

. ভারী যেমনপশমি কাপড়ে আপাতদৃষ্টিতে দেহ বড় দেখায়

. ফ্লানেল, ডেনিম প্রভৃতি নিষ্প্রভ জমিনের কাপড় বেশি আলো শোষণ করে, তাই এরূপ কাপড়ে কোনো বস্তু ছোট দেখায়। বয়স্ক মোটা মানুষের জন্য এরূপ বস্ত্র উপযোগী।

. চকচকে কাপড়ে আলোর প্রতিফলন হয় বলে পরিধানকারীকে বড় দেখায়। যেমন- সার্টিন, মারশেরাইজ

করা সুতির বস্ত্র ইত্যাদি। যেসব কাপড়ে ধাতব তন্তুর কাজ থাকে সেগুলোর জমিনও চকচকে হয়

লম্বা, রোগা অল্প বয়সীদের জন্য এমন জমিন মানানসই

সুগঠিত দেহাকৃতি অধিকারীরা সব ধরনের জমিনের পোশাকই পরতে পারে। ঋতু, দেহের আকৃতি বয়স ভেদে বস্ত্রের জমিন নির্বাচন করতে হয়

কাজপরিবারের সদস্যদের মধ্যে কার জন্য কী ধরনের জমিনের বস্ত্র প্রয়োজন এবং কেন প্রয়োজন - উল্লেখ কর

 

 পোশাকে শিল্পনীতি

পোশাকে ডিজাইন সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন শিল্প উপাদানগুলো যথাযথভাবে ব্যবহার করতে শিল্পের মৌলিক নীতিমালার জ্ঞান আবশ্যক। কাজেই শিল্প উপাদানগুলো সুসংগঠিত উপায়ে ব্যবহার করার জন্য যে নীতিমালাগুলো আমাদের দিকনির্দেশনা প্রদান করে থাকে তাদের শিল্পনীতি বলে। সুন্দর আকর্ষণীয় ডিজাইন সৃষ্টিতে শিল্পের ভারসাম্য, অনুপাত, প্রাধান্য, ছন্দ মিল নীতিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ডিজাইনের নীতিমালার জ্ঞান জীবনের সর্বক্ষেত্রেই প্রয়োগ করতে হয়। পোশাকের নকশা নির্বাচন, পোশাক তৈরি, আনুষঙ্গিক উপকরণ নির্বাচন, ওয়ারড্রোব পরিকল্পনা ইত্যাদি শিল্পনীতি ছাড়া কল্পনা করা যায় না

পোশাকে ভারসাম্যকেন্দ্র স্থির রেখে যখন দুই দিকের সম দূরত্বে সম ওজনের বস্তুসামগ্রী রাখা হয় তখন তাকে ভারসাম্য বলে। অর্থাৎ ভারসাম্যে দুই দিকের ওজন শক্তি একই থাকে। ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপাদান এমনভাবে বিন্যস্ত করা হয় যাতে কোনো একটি অংশ অন্য অংশের চেয়ে অধিক ভারী বা ক্ষমতাসম্পন্ন না হয়। পোশাকে তিন ধরনের ভারসাম্য দেখা যায়। প্রত্যক্ষ, অপ্রত্যক্ষ রশ্মিগত ভারসাম্য। নিম্নে দুই ধরনের ভারসাম্য দেখানো হলো

 

 

প্রত্যক্ষ ভারসাম্য

অপ্রত্যক্ষ ভারসাম্য

 

 

. প্রত্যক্ষ ভারসাম্য (Formal balance) - লম্বালম্বি বা আড়াআড়িভাবে কোনো ডিজাইনের উভয় দিক ক্ষেত্রে একই রকম দেখায়। এরূপ ভারসাম্য সবচেয়ে বেশি স্থির মর্যাদাসম্পন্ন মনে হয়। কিন্তু বারবার ধরনের ডিজাইনের পুনরাবৃত্তি করলে একঘেয়ে লাগতে পারে। পোশাকের দুই দিকে একই উচ্চতায় একই ডিজাইনের দুইটি পকেট কিংবা একই ধরনের প্লিট দিয়ে পোশাকের প্রত্যক্ষ ভারসাম্য সৃষ্টি করা যায়।

. অপ্রত্যক্ষ ভারসাম্য (Informal balance) - ক্ষেত্রে উভয় দিকে সমওজনের বস্তু থাকলেও কেন্দ্ৰ থেকে সম দূরত্বে বা একই উচ্চতায় অবস্থান করে না। ধরনের বিন্যাস খুবই চিত্তাকর্ষক (interesting), তবে এক্ষেত্রে অধিক দক্ষতা চিন্তা প্রয়োজন। এরূপ বিন্যাসে-

  • এক দিকে বড় জিনিস একটি অন্য দিকে ছোট জিনিস কয়েকটি রাখা যেতে পারে।
  • অধিক আকর্ষণীয় বস্তুটি কেন্দ্র থেকে কাছে রেখে কম আকর্ষণীয় বস্তুগুলো দূরে রাখা যেতে পারে।
  • কোনো কোনো ক্ষেত্রে দূরত্ব কমানোর জন্য উজ্জ্বল রং ব্যবহার করা যেতে পারে।

পোশাকে অনুপাত- পোষাকের একটি অংশের সাথে অন্য অংশের এবং প্রতিটি অংশের সাথে সম্পূর্ণ - জিনিসটির সম্পর্কই অনুপাত। অনেক ব্যক্তি আছে যারা অনুপাত বোধ নিয়েই জন্ম গ্রহণ করে, তবে বিষয়ে সহজেই শিক্ষা লাভ করা যায়। অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ করে পোশাকের ক্ষেত্রে এটি একটি অংকের ব্যাপার। বিষয়টি যাচাই করার জন্য প্রয়োজন- গজ ফিতা, স্কেল ইত্যাদি। দেখা গেছে বোতামের আকার রং বাছাই, দুটি বোতামের মধ্যবর্তী দূরত্ব, লেসের চওড়া বাছাই এবং এদের মাধ্যমে কয়েকটি সারি করতে হলে সারিগুলোর মধ্যবর্তী দূরত্ব ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনুপাত মেনে চলা আবশ্যক

 কাজএকটি পোশাকে কীভাবে ভারসাম্য আনা যায় তা বর্ণনা কর

পোশাকে ছন্দ রং, রেখা, বিন্দু, আকার, জমিন ইত্যাদি শিল্প উপাদানগুলো পুনঃ পুনঃ ব্যবহার করে ছন্দ সৃষ্টি করা যেতে পারে। পোশাকের ডিজাইনে ছন্দ রক্ষা করলে চোখ একটি রেখা বা রং থেকে আর একটি রেখা বা রঙের দিকে আকৃষ্ট হয়। পোশাকে চারটি পদ্ধতিতে ছন্দ আনা যায়। যথা

) পুনরাবৃত্তি (Repetition )-রেখা, রং বা আনুষঙ্গিক উপকরণ বারবার ব্যবহার করে কিংবা সেলাই, বোতাম, সূচিকর্ম, লেস ইত্যাদির সমান্তরাল লাইন সৃষ্টি করে ছন্দ আনা যায়। দেখা গেছে, তিন বা ততোধিকবার রেখা বা আকার ব্যবহার করলে তা একটি নকশায় পরিণত হয়।

) বিকিরণ (Radiation)- একটি কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন - দিকে রেখা ব্যবহার করে ছন্দ সৃষ্টি করা যায়। পোশাকের গলার রেখা, স্কার্ট হাতায় ডার্ট, টাকস্, পুঁতি, সিকুয়েন্স, সূচিকর্ম ইত্যাদির মাধ্যমে ধরনের ছন্দ আনা যায়

) ক্রমবিন্যাস ( Gradation)-রঙের সেড, রেখা বা আকৃতির ক্রম পরিবর্তন করে ছন্দ সৃষ্টি করা যায়। রং বা রেখার এই পরিবর্তন প্রস্থ বরাবর না করে দৈর্ঘ্য বরাবর করলে চোখ বেশি আন্দোলিত হয়।

8) নিরবচ্ছিন্নতা ( Continuity) - পোশাকে সরল, ঢেউ খেলানো, জিগজ্যাগ ইত্যাদি চলমান রেখা ব্যবহার করে ছন্দ আনা যায়। ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা ভাঙার জন্য আড়াআড়ি বা কোনাকুনি রেখা ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন- কুচি দেওয়া লম্বালম্বি রেখার পোশাকে আড়াআড়ি রেখার পকেটের ব্যবহার।

পোশাকে প্রাধান্য-পোশাকের যে অংশে দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় তাই - হচ্ছে প্রাধান্যের কেন্দ্রবিন্দু। শরীরের কাঠামোর সাথে প্রাধান্যের বিন্দু সম্পর্কযুক্ত। কেননা দেখা গেছে যে, দেহের যে অংশ বেশি আকর্ষণীয় সে অংশেই সাধারণত প্রাধান্য আনা হয়। প্রাধান্য সৃষ্টির জন্য গাঢ় বা বিপরীত রঙের কেট, বোতাম, লেস ইত্যাদি বাছাই করা যেতে পারে।

পোশাকে মিল একটি পোশাকের বিভিন্ন অংশ বস্তুর সাথে - সম্পর্কই মিল। রং, রেখা, আকার, জমিন ইত্যাদি উপাদানগুলোর যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে পোশাকে মিল বজায় রাখা যায়। মিল বজায় রাখার জন্য -

  • একই রকম আকৃতি বা রেখা ব্যবহার করা যায় যেমন- বর্গাকার বা স্কোয়ার গলার সাথে বর্গাকৃতি পকেট সংযোজন করা যেতে পারে।
  • সালোয়ার, কামিজ ওড়নার রঙের সাথে মিল থাকতে হবে।
  • ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব উপলক্ষের সাথে সঙ্গতি রেখে ডিজাইন নির্বাচন করতে হবে।
  • পোশাকের জমিনের সাথে আনুষঙ্গিক উপকরণের (Accessories) মিল থাকতে হবে।

তবে অতিরিক্ত মিল আবার অনেক সময় একঘেয়ে ভাব আনয়ন করে। কাজেই যুক্তিসঙ্গতভাবে বৈচিত্র্য আনয়ন করতে হবে।

কাজস্কুলের ক্লাশ পার্টিতে তোমার পোশাক নির্বাচনের সময় কীভাবে মিল রক্ষা করবে বর্ণনা দাও।

পোশাকে শিল্পনীতির যথাযথ ব্যবহার করতে পারলে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব যেমন সুন্দর হবে তেমনি তার আত্মবিশ্বাসও বৃদ্ধি পাবে। তাই পোশাকে শিল্পনীতির প্রয়োগ সম্পর্কিত জ্ঞান সবারই অল্পবিস্তর থাকা প্রয়োজন

 

 

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion